সঠিক নিয়ম মেনে ত্বকের যত্ন, ভালো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার এবং ঠিকমতো মেকাপ করার পরও দেখা যায় ত্বক ভালো থাকছে না। কোন কিছুতেই যখন ফলাফল পাওয়া যায় না তখন অনেকে নিজের ত্বক নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে। এ সমস্যার কারণ জানতে গেলে দেখা যায় লাইফস্টাইল কিংবা জীবনযাত্রায এলোমেলো রয়েছে। তাই আপনার ত্বককে সুস্থ রাখতে আপনার লাইফস্টাইল এ কি কি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন জেনে নেয়া যাক :
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস :
আমরা যা খেয়ে থাকি তার প্রভাব আমাদের ত্বকে সরাসরি পরে থাকে। অনেক সময় আমরা স্কিন কেয়ারের গুরুত্ব দিলেও ত্বকের যত্নে নিজের ডায়েট কিংবা খাদ্য অভ্যাসে কোন পরিবর্তন আনে না। ফিটনেস এর জন্য যেমন একটি সঠিক ডায়েট অনুসরণ করা প্রয়োজন ঠিক তেমনি ত্বকের জন্য এটি ডায়েট মেনে চলা জরুরি৷
অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া কিংবা বাইরের খাবার আমাদের স্কিনকে আরো বেশি তৈলাক্ত করে ব্রণের প্রবণতা বাড়িয়ে দেন। তাই আপনার ডায়েটের প্রতিদিন রাখতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার৷ ত্বকের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন খেতে পারেন গ্রিন ট্রি৷ গ্রিন টি-তে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, নানাবিধ এনজাইম, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন বি-সহ বেশকিছু উপাদান। এছাড়া প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখতে হবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার৷ যেমন টমেটো ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস৷ এছাড়া এতে আরো রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়া। তাই প্রতিবেলা খাবারের সাথে খেতে পারেন টমেটোর সালাদ৷ গাজর ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং অনেকের ত্বক রোদে পুড়ে কালো হয়ে যায় সে কালো দাগ দূর করতেও গাজর সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান বিটা ক্যারোটিন৷ যা ত্বকের জন্য উপকারী৷ প্রতিদিন খাবারে রাখতে পারেন ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ। মাছের তেল শরীরসহ ত্বকের জন্য উপকারী। এছাড়া যে কোনো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনই খাওয়া উচিত যেমন মুরগির মাংস, ডিম। গরুর মাংস প্রোটিনের উৎস হলেও তা ত্বকের জন্য উপকারী নয়। তাই গরুর মাংস খেতে হবে পরিমাণ বুঝে৷ ত্বকে সুস্থতার জন্য আরো প্রয়োজন ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার৷ ত্বক ভালো রাখতে প্রতিদিন যে কোন একটি ফল খাওয়া উচিত যেমন কলা, আপেল, নাশপাতি, কমলা ইত্যাদি৷ এছাড়া খেতে হবে প্রচুর পরিমাণ সবুজ শাকসবজি। ত্বকের সুস্থতার জন্য পানির বিকল্পে আর কিছুই নেই। পানি শরীরের ভিতরে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে দিয়ে ত্বককে ভালো রাখে। তাই প্রতিদিন চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করা জরুরী। পানি ছাড়া অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, স্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
ঘুম :
বর্তমান লাইফ স্টাইলে এখন সবারই কম বেশি রাত জাগা হয়ে থাকে। রাতে দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া এবং দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা এখন আমাদের লাইফস্টাইলের এর অংশ। কিন্তু এর অনেক ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। রাতে দেরিতে ঘুমানোর জন্য আমাদের চোখে নিচের ডার্ক সার্কেল, ব্রণ সহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
সারাদিনের ব্যস্ততার পর আমাদের শরীরের প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম৷ তাই দিনের পর দিন রাত জেগে মোবাইল ফোন ইউজ করা কিংবা ল্যাপটপে কাজ করার প্রভাব আমাদের ত্বকে ও স্বাস্থ্যের উপর পরে থাকে। তাই আপনার ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে৷
মানসিক স্বাস্থ্য :
অনেক সময় আমাদের মুখে অনেক ব্রণ উঠে। সঠিক স্কিন কেয়ার করেও সে ব্রণ দূর করা যায় না, এর কারণ হিসেবে দেখা যায় অতিরিক্ত মানসিক চাপ কিংবা স্ট্রেস৷ অতিরিক্ত স্টেসে থাকলে আমাদের বডি তাদের সিস্টেমের ভারসাম্য হারায়। তখন আমাদের ত্বকে নানাবিদ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চেষ্টা করতে হবে একটি স্ট্রেস মুক্ত জীবন যাপন করতে। স্ট্রেস থেকে বাঁচতে মেডিটেশন, ইয়োগা, ব্যায়াম কিংবা পছন্দের যেকোনো কাজ করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া :
সঠিক স্কিন কেয়ার করার পরেও যদি ত্বকের সমস্যা দূর না হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ অনেক সময় স্বাস্থ্যগত ত্রুটির কারণেও স্কিনের সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা নেয়া জরুরী।