পিরিয়ড নারীর জীবনে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট একটি সময়ে একজন নারীর পিরিয়ড হয়ে থাকে৷ কিন্তু অনেক সময় পিরিয়ড নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে কিংবা অনেক পরে হয়ে থাকে। ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে হলে এবং তা যদি ৩ দিনের কম বা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তখন তাকে অনিয়মিত পরিয়ড বলা হয়। সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি পিরিয়ড সময়ের অনেক আগে হয়ে যাওয়া কোনোটিই শরীরের জন্য ভালো নয়। আজকে জেনে নেয়া যাক কেন পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে :
পিসিওএস :
পিরিয়ড অনিয়ম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পিসিওএস বা পলিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম৷ পিসিওএস একটি মেটাবলিক
ডিজার্ডার। এর ফলে নারীদের শরীরের পুরুষ হরমোন অনেক বেশি বেড়ে যায়। ডিম্বাশয় ছোট ছোট সিস্টোয়স থাকে৷ সাধারণত ১৮ থেকে ৪৫ বছরের নারীদের মধ্যে বেশি পিসিওএস শনাক্ত করা হয়ে থাকে। পিসিওএস কেন হয় তার সঠিক কারণ জানা না গেলেও বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন পরিবারের কারো বিশেষ করে মা খালাদের যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে পিসিওএস হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ এছাড়া অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও পিসিওএস হওয়ার জন্য দায়ী৷
মেনোপজ :
সহজ ভাষায় নির্দিষ্ট একটি বয়সে এসে নারীদের পিরিয়ড পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তখন একে মেনোপজ বলা হয়ে থাকে। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে মেনোপজ হয়ে থাকে৷ মেনোপজ হবার কিছুদিন আগে থেকে পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়া শুরু করে কিংবা পিরিয়ড হলেও রক্তপাত খুবই কম হয়৷ তবে যদি কারো পিরিয়ড ১ বছর বা তার বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে তবে মেনোপজ হবার একটি সম্ভবনা রয়েছে।
থাইরয়েড :
থাইরয়েড হলে আমাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, আমাদের দেহে সঠিকভাবে হরমোন প্রোডিউ হতে পারে৷ হরমোনের তারতম্য ফলে পিরিয়ডের অনিয়ম হয় বা অনেক সময় পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়৷ থাইরয়েডে সমস্যা হলে খুব বেশি থাইরয়েড হরমোন রিলিজ হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আবার অনেক সময় প্রয়োজনের থেকেও কম থাইরয়েড রিলিজ হয়।
থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিসম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিসম। তাই পিরিয়ড অনিয়মিত হলে অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা মাধ্যমে দেখে নিতে হবে থাইরয়েড হরমোনে কোনো সমস্যা আছে কি না।
ওজন বেড়ে যাওয়া কিংবা কমে যাওয়া :
পিসিওএস বা থাইরয়েড জনিত সমস্যার কারণে অনেক সময় শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমলে হরমোনের ভারসাম্যহীন হয়ে যায় ফলে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে থাকে। রক্তে অতিরিক্ত চলমান ফ্যাট থাকলে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়। ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো হঠাৎ ওজন কমে যাওয়াও কিন্তু শরীরের পক্ষে ভালো না। তাই খুব বেশি ওজন কমে গেলেও পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। ২০ বছরের উপরের নারীদের বিএমআই ১৯ এর নিচে নেমে গেলে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়৷
মানসিক চাপ :
অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।
আমাদের ব্রেইনে হাইপোথ্যালামাস নামের একটি অংশ রয়েছে। সেই অংশে কিছু হরমোন প্রোডিউ হয় যা নারীদের মাসিকের সাথে জড়িত। তাই অনেক বেশি মানসিক চাপে থাকলে হাইপোথ্যালামাস ঠিকমতো কাজ করে না। ফলে দেখা দেয় অনিয়মিত পিরিয়ড। বিষন্নতা, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, ইনসোমনিয়া,স্ট্রেস ইত্যাদি কারণে পিরিয়ডে অনিয়ম হয়ে থাকে৷
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন :
আমাদের লাইফস্টাইল পিরিয়ডের উপর প্রভাব পরে। অতিরিক্ত তেল মসলা জাতীয় খাবার, প্রসেসর ফুড, চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড ইত্যাদি খেলে পরিয়ডে সমস্যা হতে পারে৷ রাত জাগা কিংবা অতিরিক্ত ঘুমানো দুটিই আমাদের শরীরের উপর প্রভাব ফেলে। এছাড়া অনেকে দিনের পর দিন কোনো প্রকার শারিরীক পরিশ্রম করে না৷ এতেও পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।
পিরিয়ড নিয়মিত করতে :
প্রথমে একটি হেলদি লাইফস্টাইল মেইনটেইন করতে হবে৷ প্রতিদিন ৪০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেয়ে নিজের সঠিক ওজন বজায় রাখতে হবে। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে, স্ট্রেস মুক্ত থাকার জন্য মেডিটেশন করা যেতে পারে। এছাড়া শারিরীক পরিশ্রমের ফলে বিষন্নতা অনেকটা কমে আসে। শরীরে কোন হরমোনাল সমস্যা আছে কিনা তা বোঝার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে ও সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে