রোজ সকালে পত্রিকার পাতা উল্টালেই আমরা দেখতে পাই ” গৃহবধুর আত্মহত্যা ” কিংবা ” আশানুরূপ ফল না পাওয়ার জন্য ছাত্রের আত্মহত্যা ” । বেঁচে থেকে লড়াই করার থেকে এখন যেন আত্মহত্যা করাই অনেক বেশি সহজ হয়ে উঠেছে। আত্মহত্যা নিয়ে অনেক বেশি সচেতনতা, ব্যানার, পোস্টার হলেও আত্মহত্যা থামানো যাচ্ছে না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ছাত্র ও তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা অনেক বেশি। এছাড়া যে কোনো বয়সের মানুষেই ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইট ও যেকোন মানসিক অসুস্থতার কারণে আত্মহত্যা করতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা যতটা শারীরিক সমস্যাকে গুরুত্ব দেই মানসিক সমস্যাকে ততটা গুরুত্ব দেই না। তাই জেনে নেয়া যাক আত্মহত্যার কিছু কমন কারণ :
নারীর আত্নহত্যার কারণ :
নারীদের আত্নহত্যা কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দাম্পত্য কলহ, একাকিত্ব ও নানা পারিবারিক সমস্যা। এখনও আমাদের সমাজের নারীরা অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং যেকোনো কিছুতেই তাদের দোষারোপ করা হয়৷ যেমন একটি দাম্পত্যর যদি সন্তান না হয় সব অপবাদ দেয়া হয় নারীকে। বিবাহ বিচ্ছেদ কারণ হিসেবেও নারীকে দায়ী করা হয়। ছোট বেলা থেকেই পরিবার ও
সমাজের নানা অপবাদ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা একপর্যায়ে আত্নহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন।
পুরুষের আত্নহত্যা :
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি আত্নহত্যা করলেও পুরুষদের সংখ্যাও কম না। নারীরা অতিরিক্ত আবেগতাড়িত হয়ে আত্নহত্যা করলেও পুরুষরা অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার কারণে আত্নহত্যা করে থাকে৷ বাংলাদেশের বেশিরভাগ পরিবারের আয়ের উৎস পুরুষেরা। তাই অনেক পরিবার করোনাকালীন সময় তাদের সর্বস্ব হারিয়েছে৷ এইসময় টা অনেক পুরুষ মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই অন্যান্য সময় থেকে করোনাকালীন সময় ছেলেদের আত্নহত্যার হার ছিল ভাবিয়ে তোলার মতো।
তরুণ ও ছাত্রদের আত্মহত্যা :
বলা হয়ে থাকে নতুন প্রজন্মের কাছে নাকি আত্নহত্যা একটি ছেলেখেলা হয়ে গিয়েছে। কথায় কথায় নাকি তারা আত্নহত্যার কথার চিন্তা করে ফেলে। তরুণ ও ছাত্রদের আত্নহত্যা কারণগুলো মধ্যে হচ্ছে প্রেমে বিচ্ছেদ, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, মা বাবার বিচ্ছেদ,মাদাক আসক্ত ইত্যাদি।
প্রবীণদের আত্নহত্যা :
প্রবীণদের আত্নহত্যা হার বাংলাদেশে কম হলেও ফেলে দেয়ার মতো না৷ প্রবীণদের আত্নহত্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে একাকিত্ব ও শেষ বয়সে নিজেকে বোঝা মনে করা৷ বেশিরভাগ সন্তানেরা নিজের পড়ালেখা শেষ করে যে যার মতো অন্য শহর কিংবা দেশ ছেড়ে চলে যায়। আবার অনেকে মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাদের সঠিকভাবে যত্ন নেয়ার মানুষও থাকে না। সন্তানেরা তাদের বারবার কটু কথা শুনিয়ে থাকে এবং তখন তারা নিজেদের পরিবারের বোঝা ভাবে ও বিষন্নতার শিকার হন৷ এই বিষন্নতাই একসময় গিয়ে আত্নহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শেষ বয়সে একাকী জীবন মেনে না নিয়ে আত্নহত্যা করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে কম না।
মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন :
আপনার পরিবার, কাছের মানুষ ও নিজের মানসিক সমস্যাকে গুরুত্ব দিন। শারীরিক কোন সমস্যা দেখা দিলে আমরা যেমন বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেই, তেমনই মানসিক সমস্যা দেখা দিলেও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াতে লজ্জাবোধ করার কিছু নেই। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই মানসিক সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞ শরণাপন্ন হতে চান না। সঠিক চিকিৎসা ও কাউন্সিলিং নিলে যেকোনো ধরনের মানসিক অবসাদ থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তাই নিজের মধ্যে বা পরিবারের কারো মধ্যে মানসিক সমস্যার কোন লক্ষণ দেখা দিলে কিংবা কারো মধ্যে যদি আত্মহত্যা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় তাহলে অবশ্যই দেরি না করে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া যে কোনো সমস্যাতে বিশ্বস্ত কারো সাথে আলাপ করতে হবে, অনেক সময় শুধু কথা বলাতেই একটি সমস্যা সমাধান বেরিয়ে আসে।