একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে তার গর্ভকালীন সময়। এ সময়টা একজন নারীর চাহিদা থাকে বাড়তি যত্ন। অনেক সময় সঠিক পরিচর্যা ও যত্নের অভাবে গর্ভকালীন মায়ের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায়। তাই জেনে নেয়া যাক গর্ভকালীন সময় যে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী।
১। পুষ্টি নিশ্চিত করা :
মা যেসব খাবার খায় তার মাধ্যমেই গর্ভ এ থাকা শিশু পুষ্টি পেয়ে থাকে। তাই মা যাতে সঠিক পুষ্টি পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্রতিদিন খাবারে জিংকসমৃদ্ধ খাবার থাকতে হবে যেমন ছোলার ডাল, কাজু, চিনা বাদাম, শিমের বিচি, মুরগির মাংস, মাছ, দুধ ইত্যাদি। এছাড়া প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়াম, আয়রন, আয়োডিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ইত্যাদি খাবার খেতে হবে।
গর্ভকালীন সময় যতটা সম্ভব ঘরে বানানো পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে৷ বাইরের অতিরিক্ত তেল মসলা জাতীয় খাবার খেলে গ্যাস্টিক, ডায়রিয়া কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য মতো নানা ধরণের সমস্যা হতে পারে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও অন্যান্য যেকোনো ধরণের জটিলতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
২। নিয়মিত চেকাআপ :
গর্ভকালীন সময় নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে শারীরিক চেকআপ করিয়ে নেয়া অনেক বেশি জরুরী। সন্তান ধারণের আগে মায়ের ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি শারীরিক পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন। সেইসাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তান ধারণের তিনমাস আগ থেকে নিয়মিত ফলিক অ্যাসিডসহ অন্যান্য ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। ডায়াবেটিসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের জটিলতা থাকলে বাড়তি সচেতন হতে হবে। গর্ভকালীন সময় অতিরিক্ত সাদা স্রাব কিংবা রক্তপাত দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। একজন গর্ভবতী নারীর প্রায় প্রতি মাসে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এক্ষেত্রে কোনো রকম অবহেলা করা যাবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি তথ্য অনুযায়ী, একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে অবশ্যই কমপক্ষে চারবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। এই চারবার হচ্ছে যথাক্রমে ১৬, ২৮, ৩২ ও ৩৬ তম সপ্তাহে। এছাড়া কারো যদি শারীরিক জটিলতা থাকে তাহলে নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
৩। মানসিক স্বাস্থ্য :
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে গর্ভকালীন সময়ে আমরা শারীরিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনোযোগী হলেও মানসিক অবস্থার কথা তেমন চিন্তা করিনা। কিন্তু একজন মায়ের মানসিক অবস্থা যদি খারাপ থাকে তার প্রভাব পড়বে তার শরীর ও তার গর্ভে থাকা সন্তানের উপর। অনেক নারী গর্ভকালীন সময় বিষন্নতা ও উদ্বেগের শিকার হন। এছাড়া গর্ভে থাকার সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পরেন। সেক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি তার মানসিক অবস্থার খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে গর্ভকালীন সময় নিজেকে পুরোপুরি ঘরে আবদ্ধ করে ফেলেন তা না করে নিজের প্রিয় কাজ করে সময় কাটানো যেতে পারে। প্রার্থনা করা, গান শোনা, হালকা ব্যায়াম করা, বই পড়া টেলিভিশন দেখা ইত্যাদি মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। ঝুঁকি নেই এমন স্থানে মাঝেমধ্যে বেড়াতে গেলে ও প্রিয় মানুষের সাথে গল্প করেও মানসিক অবস্থা ভালো রাখা যায়। গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়ে গেলে বিশেষজ্ঞ শরণাপন্ন হয়ে কাউন্সিলিং নিতে হবে।
৪। পরিবারের সহযোগিতা :
একজন নারীর জীবনে এ সময় কাম্য থাকে তার পরিবারের সহযোগিতা এবং সে আশা করে তার পরিবারের প্রত্যেকটি ব্যক্তি তার পাশে থাকবে। নানা কারণে একজন গর্ভবতী নারী দুশ্চিন্তা গ্রস্ত থাকে ও মানসিকভাবে দুর্বল থাকে পরিবার এবং স্বামীকে পাশে পেলে সে সাহস অনুভব করে। একজন গর্ভবতী নারীর পরিবারের সদস্যদের উচিত তার পাশে থাকা এবং তার বাড়তি যত্ন করা। গর্ভবতী মাকে দিয়ে কোনো ভারী কাজ করানো যাবে না এবং তার সব ধরণের কাজে পরিবারের সাহায্য করতে হবে৷
৫। প্রসব পরবর্তী যত্ন :
প্রসবের পর সবাই নবজাতক সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। কিন্তু সে সময় মায়েরও চাই বাড়তি যত্ন। প্রসবের পরেও চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চেকাআপ করাতে হবে। এ সময় রক্তচাপ, পালস, তাপমাত্রা ও প্রস্রাবের পরিমাণ ঠিক আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। অনেকের সন্তান জন্মের পর ডায়বেটিস ও নানা ধরণের হরমোনাল সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রসবের পর একজন মা তার সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেও নিজের যত্নের ক্ষেত্রে অবহেলা করা যাবে না।