স্কিনের অনেক ধরণের সমস্যার মধ্যে ব্রণ বা একনে হলো সবচেয়ে কমন সমস্যা৷ মুখে ব্রণ হয় নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকি। তবে আমরা অনেকেই জানি না ব্রণ হবার পেছনে আসল কারণ কি, ব্রণ হবার নির্দিষ্ট কারণ জানলে অনেক সময় সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই জেনে নেওয়া যাক ব্রণ হবার পিছনের সাধারণ কারণ গুলো কি।
ব্রণ কি?
মূলত ব্রণ দেখা দেয় তেলগ্রন্থি কার্যকলাপের জন্য ও এ গ্রন্থি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে। সেবাসিয়াস গ্রন্থি সেবাম নামে একপ্রকার তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে যা ত্বককে মসৃণ রাখে। কোনো কারণে সেবাসিয়াস গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণের বাধার সৃষ্টি হয় এবং তা ভেতরে জমে ফুলে উঠে যা ব্রণ নামে পরিচিত। ব্রণ উঠার বিভিন্ন কারণ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ গুলো হলো :
১। হরমোনাল কারণ :
ব্রণ উঠার অন্যতম কারণ হচ্ছে হরমোন৷ সেজন্য বয়সন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ব্রনের প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায়। কারণ এ সময় শরীরে হরমোনের বিশাল বড় একটি পরিবর্তন আসে। বয়স ১৪ থেকে ১৯ এর মধ্যে মুখে ব্রণ দেখা দিলেও সময় ও বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা নিজে থেকেই কমে যেতে থাকে। এছাড়া আরো কিছু সময় হরমোনের পরিবর্তন হয় যেমন মেয়েদের মাসিকের সময় ও প্রেগ্ন্যাসির সময়। মাসিকের আগে অনেকের মুখে ব্রণ দেখা দেয়। হরমোনের তারতম্য ঠিক হয়ে আসলে তা আবার ঠিক হয়ে যায়৷ এছাড়া কিছু হরমোন জনিত রোগ রয়েছে সেক্ষেত্রেও ব্রণের প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে হরমোন রিলিজ হতে সমস্যা হয় ও যার প্রভাব স্কিনে পরে। তাই পলিসিস্টিক ওভারির অনেক গুলো লক্ষণের মধ্যে মুখে অতিরিক্ত ব্রণ একটি লক্ষণ। চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাফি ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ সনাক্ত করে থাকেন।
২। তৈলাক্ত ত্বকে :
সব ধরণের ত্বকেই ব্রণ দেখা দেয় তবে সবচেয়ে বেশি ব্রণের সমস্যার মধ্যে পরতে হয় তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের। ত্বকে থাকা সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদনের জন্য ত্বক তৈলাক্ত হয়। এই গ্রন্থি স্কিনকে কোমল রাখতে সাহায্য করে কিন্তু অতিরিক্ত পরিমানে রিলিজ হলে স্কিনে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে গ্রন্থি বন্ধ হয়ে গিয়ে অক্সিজেনের অভাবে ব্রণ উঠা শুরু করে৷
৩। ভুল প্রসাধনী ব্যবহার :
আমরা অনেক সময় লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে কিংবা অন্য কেউ ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছে শুনে যেকোনো ধরণের মেকাআপ সামগ্রী কিংবা স্কিন কেয়ার সামগ্রী ব্যবহার করা শুরু করি। কিন্তু এতে স্কিনের উপকার হওয়ার থেকে বরং ক্ষতি হয়। কারণ সব ধরণের সামগ্রী সবার জন্য উপযোগী না, স্কিনের ধরণ ও সমস্যা না বুঝে হুটহাট যেকোনো ধরণের সামগ্রী ব্যবহার করলে স্কিনে ব্রণ উঠতে পারে৷ আবার অনেকে দীর্ঘদিন এক ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করে হঠাৎ করে সামগ্রী পরিবর্তন করে ফেলে এতেও মুখে ব্রণ উঠতে পারে।
৪। জীবনযাত্রা :
অনেক সময় ব্রণে হবার সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় তখন খেয়াল করলে দেখা যায় জীবনযাত্রা এলোমেলো। যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমানো। অনেকেই রাত জেগে থাকে যার ফলে মুখে ব্রণ উঠতে পারে। আবার অতিরিক্ত জাংক ফুড কিংবা তৈলাক্ত খাবার ব্রণের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। পানি কম পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা হতে পারে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে ও মুখে ব্রণ উঠতে পারে।
৫। মানসিক চাপ :
কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে ও মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে মুখে ব্রণ সহ নানা ধরনের ত্বকের সমস্যা হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়াও বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং বিভিন্ন স্কিন ডিজিজের কারণে মুখে অতিরিক্ত ব্রণ দেখা দিতে পারে।