ব্রেস্ট ফিডিং এর উপকারিতা

বলা হয়ে থাকে একজন নবজাতক শিশুর প্রথম টিকা তার মায়ের দুধ। পুরো বিশ্বে যত নবজাতক শিশুর মারা যায় তার মধ্যে বেশিরভাগ জন্মের পর সঠিক নিয়মে মায়ের দুধ না পাওয়ার কারণে মারা যায়। নানা ধরনের কুসংস্কার, অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাবে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই পুরো বিশ্বে মায়েদেরকে উৎসাহিত করা হয় নবজাতকের জন্মের পর অন্য কোন কিছু না দিয়ে তাকে প্রথম মায়ের দুধ দেয়ার জন্য। জেনে নেয়া যাক ব্রেস্ট ফিডিং এর কি কি উপকারিতা রয়েছে :

ব্রেস্ট ফিডিং এর উপকারিতা :

মায়ের দুধ পান করে শুধু যে শিশু উপকৃত হয় এমন না। শিশুকে দুধ পান করিয়ে একজন মাও সুস্থ থাকে। বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর মায়ের জরায়ু বড় হয়ে যায় কারণ এই জরায়ুতেই বাচ্চা ছিল। বাচ্চা জন্ম দেয়ার কিছুদিন পর থেকে জরায়ু ছোট হতে থাকে৷ পাশাপাশি শিশুকে দুধ পান করালে দ্রুত জরায়ু টি স্বাভাবিক হয়ে যায়। সারাবিশ্বে অনেক নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, যার সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ পান করালে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি  অনেক কমে যায়। জানা গেছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া অনেক রোগী কখনো বাচ্চাকে দুধ পান করাননি। স্তন ক্যানসার পাশাপাশি জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে আসে। সন্তান জন্মদানের পর অনেক মায়ের ওজন বেড়ে যায়, তাই নিয়মিত বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করালে সে ওজন দ্রুত কমে আসে। বাচ্চা জন্মদানের পর অনেক মায়ের বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করালে হরমোন ব্যালেন্স হয়ে আসে। ফলে বিষন্নতা কিছুটা কেটে গিয়ে মন ভালো থাকে। তবে অনেকের সন্তান জন্মদানের পর ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন দেখা দেয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ শরণাপন্ন হতে হবে৷ 

মায়ের পুষ্টি :

সন্তান প্রসবের পর মায়েদের ওজন বেড়ে যায় ফলে অনেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে কিছুদিন পরেই ডায়েট করা শুরু করে। যা একদম অনুচিত৷ সন্তান জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত একজন মায়ের পর্যাপ্ত পুষ্টির প্রয়োজন। কারণ মায়ের পুষ্টির থেকেই সন্তান পুষ্টি পাবে। মায়ের খাবারে প্রোটিন শর্করা ও ফ্যাট এই তিনটি উপস্থিতি থাকতে হবে। প্রতিদিন দুটো ডিম ও এক গ্লাস দুধ পান করতে হবে৷ সরাসরি দুধ খেতে না চাইলে দুধ জাতীয় খাবার যেমন, পায়েস, পুডিং,  সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে৷ প্রতিদিন যেকোনো ধরনের ফল খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। প্রোটিনের উৎস হিসেবে ডিমের পাশাপাশি মাছ মাংস ও ডাল জাতীয় খাবার খেতে হবে। এছাড়া সবুজ পাতার শাকসবজি, কাঁচা পেপে, গাজর, মিষ্টি আলু, নানা ধরনের বাদাম ইত্যাদি খেতে হবে। অনেক সময় বুকে দুধ কম আসলে মাকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালরির খাবার খেতে বলা হয়, এটি সঠিক নয়৷ চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার খেলেই শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাবে। তবে প্রসেসড ফুড ও বাইরের অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। 

অনেক সময় মা বিষন্নতা কিংবা অতিরিক্ত চিন্তা করলে বুকে দুধ আসে না। তাই মাকে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে, মন ভালো রাখার জন্য অবসরে প্রিয় কাজ করা যেতে পারে যেমন গান শোনা, গাছের সাথে সময় কাটানো, বই পড়া, গল্প করা, 

মাঝে মাঝে হাঁটতে যাওয়া ইত্যাদি। মায়ের এই সময়টা সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে তার পরিবারের সদস্যরা, পরিবারের সহযোগিতা পেলে যেকোনো মায়ের পথ চলা সহজ হয়ে যায়৷ 

কুসংস্কার : 

জন্মের পর অনেক শিশুকে গ্লুকোজ কিংবা মধু খাওয়ানো হয়৷ যা একেবারে অনুচিত। মধু খাওয়ানোর ফলে শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে। অনেকেই মনে করে মায়ের প্রথম শালদুধ ক্ষতিকারক আসলে এটি ভুল ধারণা , মায়ের শাল দুধ শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। অনেকের ধারণা রয়েছে অসুস্থ মা বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে না, যেকোনো পরিস্থিতেই মা তার সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারবে৷ অনেকে বাচ্চা যাতে দ্রুত বুকের দুধ ছেড়ে দেয় তার অভ্যাস গড়ার চেষ্টা করে, কিন্তু জোর করে এই অভ্যাস করার দরকার। শিশুর তার সময়মতো নিজ ইচ্ছাতেই বুকের দুধ ছেড়ে অন্য খাবারের খাওয়া শুরু করবে৷ অনেকেই মনে করেন মা যদি ঝাল বেশি খাবার খায় তাহলে শিশুর সমস্যা হবে, তবে এমন কোনো কথার যুক্তি নেই। মা তার পছন্দমতো যেকোনো খাবার খেতে পারবে তার প্রভাব বুকের দুধের উপর পরবে না।

Leave a Reply