আজকের ডিজিটাল যুগে শিশুদের মধ্যে মোবাইল, ট্যাবলেট, টিভি এবং কম্পিউটারের প্রতি আসক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিশুর শিখন প্রক্রিয়াকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে, অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক বিকাশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা শিশুর ডিভাইস নির্ভরশীলতা এর কারণ, প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
ডিভাইস নির্ভরশীলতা কী?
ডিভাইস নির্ভরশীলতা বলতে শিশুর অতিরিক্ত সময় ধরে স্মার্টফোন, ট্যাব, কম্পিউটার বা টিভির স্ক্রিনে মনোযোগ দেওয়া এবং অন্য সব কাজের চেয়ে এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা বোঝায়। এটি ধীরে ধীরে শিশুদের আসক্তিতে পরিণত হতে পারে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবন ও স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত করে।
শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
অতিরিক্ত ডিভাইস নির্ভরশীলতা শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন:
মানসিক স্বাস্থ্য: ডিভাইস আসক্তি হতাশা, উদ্বেগ, একাকীত্ব ও মুড পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
শারীরিক স্বাস্থ্য: দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার ফলে চোখের সমস্যা, স্থূলতা, ঘাড় ও পিঠের ব্যথা দেখা দিতে পারে।
সৃজনশীলতার অভাব: শিশুরা বাস্তবিক অভিজ্ঞতা থেকে দূরে সরে যায়, যার ফলে সৃজনশীলতা কমে যেতে পারে।
স্মার্টফোন, ট্যাব ও টিভির প্রতি আসক্তির কারণ।
বিভিন্ন কারণে শিশুরা ডিভাইস নির্ভরশীলতার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার ও টিভির প্রতি শিশুদের আসক্তি একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। শিশুরা বিভিন্ন কারণে এসব ডিভাইসের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে অনেক অভিভাবক সন্তানদের বিনোদনের জন্য মোবাইল বা টিভির সামনে বসিয়ে দেন। এটি ধীরে ধীরে তাদের অভ্যাসে পরিণত হয় এবং শিশুরা বিনোদনের জন্য ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। শিক্ষা ও অনলাইন ক্লাসের জন্য দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে থাকতে হয়, যা শিশুদের ডিভাইসের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। অতিরিক্ত গেম খেলা, কার্টুন দেখা কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ফলে তাদের মধ্যে আসক্তি সৃষ্টি হতে পারে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও আকর্ষণীয় ডিজিটাল কন্টেন্ট শিশুদের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে। গেম ও ভিডিও অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, শিশুদের সেগুলোতে বেশি সময় ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। ডিভাইস আসক্তি শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, সামাজিক দক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে এবং দৃষ্টিশক্তির সমস্যাসহ মানসিক উদ্বেগ বাড়াতে পারে।
ডিভাইস নির্ভরশীলতার উপকারী ও ক্ষতিকর দিক
বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিশুদের ডিভাইস নির্ভরশীলতা একটি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিশুদের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এর উপকারী ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
অনলাইন ক্লাস, ই-বুক, শিক্ষামূলক ভিডিও ও ইন্টারঅ্যাকটিভ অ্যাপ শিশুদের শেখার আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যানিমেশন, ডিজিটাল ড্রয়িং ও প্রোগ্রামিং অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুরা তাদের সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তি বাড়াতে পারে। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার ফলে চোখের সমস্যা, মাথাব্যথা, ওজন বৃদ্ধি ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। অতিরিক্ত ভিডিও গেম বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে শিশুরা অস্থিরতা, উদ্বেগ বা হতাশার শিকার হতে পারে।
উপসংহার
শিশুর অতিরিক্ত ডিভাইস নির্ভরশীলতা রোধ করা অভিভাবকদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হলেও এটি অত্যন্ত জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধি, বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা ও সঠিক অভ্যাস গড়ে তুললে শিশুরা সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে।