পরিবেশ ও জীবনযাত্রার কারণে দিন দিন শিশু ওবিসিটির পরিমাণ বাড়ছে। যা ধীরে ধীরে একটি শিশুকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে নিয়ে যায়। শিশুর বয়স ও উচ্চতা থেকে ওজনের পরিমাণ বেশি হলে সাধারণত তাকে শিশু ওবিসিটি বলা হয়। শিশু ওবিসিটি কমাতে ও তাদের আদর্শ ওজন ধরে রাখার জন্য এর পেছনের কারণ জানা অনেক বেশি প্রয়োজন। তাই জেনে নেয়া যাক শিশু ওবিসিটি সাধারণ কারণ গুলো কি :
১। জেনেটিকাল
অনেক সময় বাবা মা কিংবা পরিবারের রক্তের সম্পর্কের কারণ কারো ওবিসিটি থাকলে বাচ্চা জন্মের পর থেকে অধিক ওজনের অধিকারী হয়। সেক্ষেত্রে বাচ্চার লাইফস্টাইলের কোনো ভূমিকা থাকে না।
২। হরমোনের সমস্যা :
এটি বেশি লক্ষ্য করা যায় মেয়ে শিশুদের মধ্যে। পিসিওএসে কিংবা আরো কিছু হরমোনজনিত কারণে তাদের ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে। পিসিওএসে ইনসুলিন রেজিস্টেড হয়ে যায় ফলে খাবারকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে রক্তের অনেক সময় লাগে। এছাড়া থাইরয়েড ডায়াবেটিস ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে অল্প বয়সের শিশুরা৷ শিশুদের ক্ষেত্রে হরমোনাল সমস্যা ধরা পরতে কিছুটা সময় লাগে৷ কারণ বাবা-মা অনেক সময় হরমোনাল সমস্যাকে আমলে নেন না। অনেক সময় অতিরিক্ত ওজনের কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে গেলে শিশুদের মধ্যে হরমোনাল ইমব্যালেন্স লক্ষ্য করা যায়। হরমোনাল সমস্যা থাকার কারণে শিশুরা বারবার ক্ষুদা অনুভব করতে থাকে,ফলে তাদের প্রয়োজনের থেকে বেশি খাবার গ্রহণ করা হয়ে যায়।
৩। জীবনযাত্রা :
শিশুদের ওজন বেড়ে যাওয়ার পিছনে একটি বড় কারণ হচ্ছে তাদের জীবনযাত্রা৷ শিশুদের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, পড়ালেখা সব কিছুর মধ্যে চলে এসেছে একটি অনিয়ম৷ তাছাড়া শিশুরা এখন প্রচুর পরিমাণে জাঙ্ক ফুডের প্রতি আসক্ত। বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এখন খুবই সহজলভ্য। স্কুল গেট থেকে বের হলেই নানারকম মুখরোচর অস্বাস্থ্যকর খাবার তাদের সামনে থাকে।
এখন বেশিরভাগ বাবা-মায়েরা কর্মজীবী হওয়ার কারণে তারা সন্তানকে ঘরে তৈরি খাবারের থেকে বাইরের খাবারের উপর নির্ভরশীল করছে। বাইরের খাবারে থাকে অতিরিক্ত তেল ও মসলা যা ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী৷ ক্ষুধা নিবারনের জন্য তারা নির্ভর করছে জুস চিপ চকলেট এর মত খাবারের প্রতি।
৪। খেলাধুলার সুযোগ না থাকা :
বাচ্চারা স্কুলে যাওয়া আরম্ভ করলেই তাদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়৷ লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা ড্রইং শেখা, গান শেখা, কোচিং ইত্যাদি আরো অনেক কিছুর সাথে যুক্ত হয়ে যায়। দিনের বেশিরভাগ সময় তাদের কোন না কোন কাজ করতে হয় ফলে খেলাধুলার সময় হয়ে ওঠে না৷ এখন বেশিরভাগ বাড়ির সামনে খেলাধুলা করার কোন উপযুক্ত জায়গা থাকে না এবং স্কুলেও দেখা যায় মাঠের ব্যবস্থা থাকে না। ফলে অবসরে শিশুদের বিনোদন বলতেই থাকে মোবাইল পিসি এবং টেলিভিশন। দীর্ঘ সময় এক স্থানে বসে টেলিভিশন কিংবা মোবাইল দেখার ফলে তাদের কোন প্রকার শারীরিক পরিশ্রম হয় না৷ ফলে তারা যতোটুকু খাবার গ্রহণ করে ততটুকুই মেদে পরিণত হয়ে যায়।
৫। হজমে সমস্যা থাকলে :
ওজন বেড়ে যাওয়ার পেছনে ৮০ভাগ ভূমিকা খাবারের। অন্যান্য অনেক বিষয় থাকলেও খাবারের ভূমিকা কে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবার অভিযোগ থাকে শিশু কম খাচ্ছে তারপরও তার ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে সেক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুর হজমে সমস্যা হচ্ছে। খাবার ঠিক মতো হজম না হলে সেই খাবার শক্তিতে পরিণত না হয়ে চর্বি আকারে জমে থাকে। শিশুর হজমের সমস্যা হচ্ছে এই ব্যাপারটা সনাক্ত করতেও পরিবারের সবার কিছুটা সময় লাগে। হজমের সমস্যা জেনেটিক্যাল ভাবে হলেও এর পিছনে লাইফস্টাইলও দায়ী। প্রতিদিন অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, খেলাধুলা না করা ও ঠিকমতো না ঘুমালে শিশুদের হজমের সমস্যা হতে পারে।