এখন সবাই তুলনামূলক নিজের স্কিন নিয়ে সচেতন। ব্যস্ত জীবনে যে যার সাধ্যমত স্কিন কেয়ার করার চেষ্টা করে। সানস্ক্রিন, মশ্চারাইজার নিয়মিত ব্যবহার করলেও স্কিন কেয়ার রুটিনের সবচেয়ে অবহেলিত হলো টোনার। অনেকেই টোনার ব্যবহার করা এড়িয়ে যান কিন্তু এর রয়েছে অনেক গুনাগুন। জেনে নেয়া যাক তো টোনার কিভাবে স্কিন ভালো রাখতে সাহায্য করে :
টোনার :
ত্বকের অ্যাসিডিক বা অ্যালকালাইনের মাপকাঠিকে বলা হয় পটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন, সংক্ষেপে পিএইচ (PH)। টোনারের কাজ হচ্ছে ত্বকের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক রাখা। পি এইচ লেভের উপর নির্ভর করে আমাদের ত্বকের সুস্থতা। ত্বকের অধিকাংশ সমস্যায় হয়ে থাকে পিএইচ এর ভারসাম্য ঠিক না থাকার কারণে। আমাদের ত্বকের পিএইচ লেভেলে মাঝের মধ্যে অনেক বেড়ে যায়। মানুষের ত্বকে সেবামের পিএইচ সাধারণত ৪.৫ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত থাকে, যা স্কেল অনুযায়ী অ্যাসিডিক। অনেক সময় সেই লেভেল ৮/৯ হয়ে যায়। এর ফলে ত্বকে হতে পারে রুক্ষতা, লাল র্যাশ, নানা ধরনের সংবেদনশীলতা ও ব্রণ। তাই ত্বকের পিএইচ লেভেলে ঠিক রাখাটা অনেক বেশি জরুরি। সুতরাং টোনার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয় পি এইচ লেভেল ব্যালেন্স রাখার জন্য। পি এইচ লেভেল ঠিক থাকলে ত্বকের অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এছাড়াও টোনারের রয়েছে আরো কিছু উপকারিতা, তা জেনে নেয়া যাক।
টোনারের উপকারিতা :
১। ব্রণ কমাতে সাহায্য করে :
টোনার সাধারণত ক্লিনজিং এর পরের ধাপ। মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে তবেই টোনার ব্যবহার করা উচিত৷ ত্বক সংক্রান্ত যত ধরনের সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে ব্রণ৷ ব্রনের জ্বালাতনে নাজেহাল থাকে অনেকেই। কথা নেই বার্তা নেই যে কোন সময় মুখে উঠে থাকে একটি ব্রন যা অত্যন্ত বিব্রতকর৷ সব ধরনের ত্বকে ব্রণ উঠতে পারে কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। টোনার হতে পারে এই অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যার সমাধান৷ নিয়মিত টোনার ব্যবহারের ফলে ব্রণের সমস্যা কমে আসে। যেহেতু তৈলাক্ত ত্বকে বেশি ব্রণ দেখা যায় টোনার থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে। আবার পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে বলে শুষ্কতাও খুব বেশি দেখা দেয় না, তাই শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরাও বেঁচে যান ব্রণের ঝামেলা থেকে৷
২। বলিরেখা কমায় :
সকলেরই একটি নির্দিষ্ট বয়সে গিয়ে তকে বলি রাখার সমস্যা দেখা দেয়৷ অনেকের আবার সময় ও বয়সের আগেই ত্বকে বলিরেখা পরে যায়। বলিরেখা পরার অন্যতম কিছু কারণ হলো
সূর্যের আলো। সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি সম্পর্কে কম বেশি ধারণা থাকার পরেও আমরা সানস্ক্রিন ব্যবহারে অনিহা করি। সূর্যের ক্ষতিকারক আলোর ফলে অপরিণত বয়সে বলিরেখা দেখা দেয়। এখন সবাই বেশ স্বাস্থ্য সচেতন হবার কারণে সারা বছরে কমবেশি অনেকে ডায়েট করে থাকেন, আর ডায়েটের ফলে খাদ্য তালিকা থেকে চর্বিকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেন৷ শরীর যদি তার চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ ফ্যাট না পায় তাহলে ত্বকে অকালে বলি রাখা পড়তে পারে। বর্তমান জীবনযাত্রায় বেশিরভাগ মানুষেরই ঘুমের রুটিন এলোমেলো থাকে, রাত জাগা ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবেও অকালে বলিরেখা পরতে দেখা যায়।
লাইফ স্টাইলের একটি বিশাল প্রভাব আমাদের শরীর ও ত্বকের উপর পরে। জেদি এই বলিরেখা কমাতেও কিন্তু টোনার বিশাল বড় ভূমিকা পালন করে। বলিরেখা কমানোর জন্য টোনার ব্যবহার করলে অবশ্যই তা নিয়মমাফিক ব্যবহার করতে হবে কারণ বলি রেখার সহজে সরে যেতে চায় না। টোনার ব্যবহারের পাশাপাশি জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন খাদ্য তালিকায় সঠিক পরিমাণের পুষ্টি রাখা, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুমাতে হবে। এছাড়া বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, রোদে যাওয়ার আগে ছাতা এবং সানগ্লাস ব্যবহার করার অভ্যাস করতে হবে।
৩। ত্বককে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে :
শরীরের মতো ত্বকেও দেখা দিতে পারে ডিহাইড্রেশন। পরী রে পানি শূন্যতা দেখা দিলে ত্বক ডিহাইড্রেট হয়ে পরে। যেকোনো ঋতুতে ত্বক ডিহাইড্রেট হতে পারে। গরমকালে অতিরিক্ত ঘাম হয় কিন্তু দেখা যায় সেই তুলনায় তরল জাতীয় খাবার খাওয়া হয় না। সেক্ষেত্রে শরীর ও ত্বক দুই স্থানেই পানি শূন্যতা দেখা দেয়। আবার শীতকালে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকার কারণে তৃষ্ণা কম লাগে ও পানি কম খাওয়া হয়। ক্ষেত্রেও পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। ত্বক ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। চামড়া অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যায় ও চামড়া উঠে আসে। তাই ত্বককে হাইড্রেট রাখার জন্য টোনার ব্যবহার করা জরুরী। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
৪। ত্বককের পোরস কমাতে সাহায্য করে :
সব মানুষের ত্বক পোরস রয়েছে, পোরস ত্বকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত হতে বাধা দেয়। সুতরাং বলা যায় পোরস থাকা ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্কিনের ইলাস্টিন ও কোলাজেন লুজ হতে শুরু করলে পোরস চোখে পড়া শুরু করে। পোরস সাধারণত চোখে পড়ার কথা না, পোরস বড় হয়ে গেলেই দেখা যায়। যা ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পোরস অতিরিক্ত বড় হয়ে গেলে ব্রণ এর মত সমস্যা দেখা দেয় ও মেকআপ বসতে চায় না। নিয়মিত টোনার ব্যবহারের ফলে পোরস ছোট হয়ে আসে।