স্কিন কেয়ারে আমরা অনেক একটিভ ইনগ্রিডিয়েন্ট ইউজ করে থাকি। এগুলো সবই আমাদের স্কিন কেয়ারকে এডভান্সড লেভেলে নেয়ার জন্য এবং আমাদের স্কিনের যথাযথ যত্ন নেওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই একটিভ ইনগ্রিডিয়েন্টগুলো ব্যবহারে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। এগুলো আমাদের ত্বকের পক্ষে উপকারি হওয়া সত্বেও না জেনে একটিভ ইনগ্রিডিয়েন্টের সাথে আরেকটির মিশ্রণ অথবা পরপর একটার পর আরেকটা ব্যবহার করার কারণে অনেক সময় বিভিন্ন ধরণের ক্যামিকেল রিএকশন হতে পারে। এতে একটিভ ইনগ্রিডিয়েন্টের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, এমনকি বিপরীত বিক্রিয়া হয়ে ত্বকের মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে।
আসুন জেনে নেই ত্বকের যত্নে কোন সব ইনগ্রিডিয়েন্ট যুক্ত প্রোডাক্ট আমরা কখনই মিক্স করবোনা-
১। রেটিনল ও আলফা হাইড্রক্সি এসিড (Retinol X AHA)ঃ রেটিনল হল Fat soluble vitamin A এর যৌগ। এর মানে হচ্ছে ভিটামিন এ আমাদের শরীরে রেটিনলে পরিণত হয়। স্কিনে রেটিনল যেসব কাজ করেঃ
- স্কিনের রিংকেল ও ফাইন লাইন প্রতিরোধ করে।
- একনি সারাতে সাহায্য করে
- ত্বকের তারুণ্য ধরে থাকে।
আলফা হাইড্রক্সি এসিড বা AHA একটি ক্যামিকেল যৌগের সংমিশ্রণ যা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীজ উপাদান থেকে আসে। এটি স্কিনের এক্সফয়েলেশন তথা ডেড সেলস দূর করতে সাহায্য করে। স্কিন টার্নওভার এবং হাইপারপিগমেন্টেশন দূর করে।
এই দুইটি উপাদানের সংমিশ্রণে ত্বকে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারেঃ
-ইরিটেশন বা জ্বালাপোড়া
-ড্রাইনেস
-একনি ও হাইপারপিগমেন্টেশন ট্রিগার হয়ে বেড়ে যাওয়া।
এই দুইটি উপাদান কখনই পরপর ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে চাইলে একটিকে নাইট স্কিন কেয়ারে ও অন্যটিকে ডে স্কিন কেয়ারে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। পরপর একই সাথে ব্যবহার করা যাবেনা।
কিন্তু আপনি যদি এমন কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন যেখানে এই দুইটি উপাদান কম্বাইন করে ফরমূলেশন করা হয়েছে, তাহলে সেটি ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ বাজারে ছাড়ার আগে এসব পণ্য টেস্ট করে স্কিনের জন্য সেইফ করে তৈরি করা হয়।
২। রেটিনল ও বেনজল পারঅক্সাইড ( Retinol X Benzoyl Peroxaide) ঃআমরা সবাই জানি, বেনজল পারঅক্সাইড ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি একটি রাসায়নিক যৌগ। যার সাথে রেটিনলের মিশ্রণে দুইটি উপাদানের কোনোটিরই কার্যকারিতা বজায় থাকেনা এবং দুইটির একটির ও উপযোগিতা পাওয়া যায়না।
তবে ভিটামিন এ এর আরেকটি ফরমূলেশন যার নাম Adapalene. এটি অনেক সময় ডাক্তার রা বেনজল পারঅক্সাইডের সাথে প্রেসক্রাইব করে থাকে।
৩। রেটিনল ও ভিটামিন সি Retinol X Vitamin C ঃ রেটিনল হল Fat soluble vitamin A এর যৌগ এবং ভিটামিন সি হল Water Soluble Acid. একে Ascorbic Acid ও বলা হয়ে থাকে। যেহেতু রেটিনল ফ্যাট বা অয়েলে মিশ্রিত হয় এবং ভিটামিন সি পানিতে দ্রবীভূত হয় তাই এদের একসাথে ব্যাবহারে কোনটির বেনেফিটই ঠিকমত পাওয়া যায়না এবং সাইড ইফেক্ট দেখা দিতে পারে। এছাড়া রেটিনলের পি এইচ লেভেল ৫.০ থেকে ৬.০। এই পি এইচের ভেতর রেটিনল সবচেয়ে ভাল কাজ করে। রেটিনলের পিএইচ আমাদের স্কিনের পিএইচ ৫.৫ এর কাছাকাছি।
কিন্তু ভিটামিন সি বা L- ascorbic acid এর পিএইচ ৩.৫ এর বেশী হলে স্কিনে ঠিকমতন প্রবেশ করতে পারেনা। এই দুইটি উপাদানের পিএইচের লেভেলে বড় ধরনের পার্থক্য থাকায় এদের একই সাথে ব্যবহার স্কিনের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। স্কিনে ইরিটেশন ও জ্বালাপোড়ার সমস্যা হতে পারে।
৪। রেটিনল ও স্যালিসাইলিক অ্যাসিড (Retinol X Salicylic Acid)ঃ স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা বেটা হাইড্রক্সি এসিড, এটি একটি পানিতে দ্রবীভূত এন্টিব্যাকটেরিয়াল এসিড যা স্কিনের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দূর করে, স্কিনকে এক্সফলেয়েট করে। কিন্তু রেটিনলের সাথে একসাথে এর ব্যবহার অনেক ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে। যেমন ড্রাইনেস ও রাফনেস। তাই একটি উপাদান দিনে এবং আরেকটি রাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫। কপার পেপটাইডস ও ভিটামিন সি (Copper Peptides X Vitamin C) ঃ
কপার পেপটাইডস আমাদের স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকাশন বাড়ায়, স্কিন ফার্ম ও স্মুদ করে, ফাইন লাইন ও রিংকেল কমায়। আর ভিটামিন সি ও স্কিন ব্রাইট করে এবং কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়। কিন্তু এই দুইটি উপাদানের একত্রে মিশ্রণ ও ব্যবহার ত্বকের পক্ষে খুব একটা উপকারি নয়। কেননা কপার পেপটাইডস ভিটামিন সি কে অক্সিডাইজ করে, ফলে ভিটামিন সি দ্রুত ব্রেক ডাউন হয়, এবং এর বেনেফিট কমে যায়।